কয়লার অভাবে বন্ধের পথে বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র

আওয়ার ডেইলি বাংলাদেশ ডেস্ক –

বিদ্যুতের লোডশেডিং ঠেকাতে সরকারের যখন ত্রাহী অবস্থা, ঠিক সেই সময়ে ইসলামী ব্যাংকের স্বেচ্ছাচারিতায় বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের উপক্রম হয়েছে। নতুন করে বড় ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

আর এই জটিলতা তৈরি হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে খোলা ৮টি এলসির (লাইন অব ক্রেডিট) অর্থ আটকে রেখেছে ব্যাংকটি। যে কারণে কয়লা বোঝাই তিনটি জাহাজ বর্হিনোঙরে এলেও কয়লা ছাড় বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মজুদ কয়লা ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রার উৎপাদন করলে দৈনিক ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। আর কয়লার মজুদ রয়েছে মাত্র ৬০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে মাত্র ৫ দিনের কয়লা মজুদ রয়েছে। বর্হিনোঙরে থাকা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে না পারলে আগামী সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

কয়েকদিন ধরে সারাদেশে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মাস খানেকের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে অসহনীয় লোডশেডিং ইচ্ছা করলেই দূর করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই নোয়াখালীতে ভাঙচুরের খবরও পাওয়া গেছে। ঠিক এই সময়ে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ জটিল বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা।

খোদ বিদ্যুৎ ‍উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম এই শঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোন কারণে ওই কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং আরও বেড়ে যাবে। আমরা তাদেরকে অন্যকোন ব্যাংকে এলসি খোলার পরামর্শ দিয়েছি।

বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে বাঁশখালীর (চট্টগ্রাম) গন্ডামারা এলাকায় অবস্থিত বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, শতভাগ মার্জিন দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮টি এলসি খোলা হয়। এরমধ্যে ৫টি এলসির কয়লা খালাস করা হয়েছে, এসব এলসির মধ্যে ৩টির অর্থছাড় করার নির্ধারিত সময় ছিল যথাক্রমে গত আগস্ট মাসের ৬, ১১ ও ২২ তারিখ। সেই অর্থও ছাড় করা হয়নি।

আগের কয়লার বিল না পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসা ৩টি জাহাজ ( ১ লাখ ৬৮ হাজার টন) থেকে কয়লা খালাস বন্ধ রেখেছে রফতানিকারকরা। তারা আগের বিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কয়লা ছাড় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সাপ্লায়ার বেনিফিসিয়ারি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন রকম সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই কর্মকর্তা বলেন, দ্রুত কয়লা ছাড় করা না গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প থাকবে না। আমরা আশা করছি তার আগেই বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যাবে। এলসি ছাড় না করায় একদিকে যেমন উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি জাহাজ বসে থাকা দৈনিক ৬০ হাজার ডলার জরিমানা যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১ মিলিয়ন ডলারের ওপর জরিমানা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএস পাওয়ার-১ এর নামে ইসলামী ব্যাংকের কোন শাখায় ঋণ নেই। শুধু ইসলামী ব্যাংক কেনো বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে কোন ঋণ নেই। যা ঋণ রয়েছে সবটাই বিদেশি ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংক গুলশান সার্কেল-১ ব্র্যাঞ্চে চলতি হিসাব রয়েছে। সেখানে এলসির বাইরে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার মতো আমানত রয়েছে। সেই হিসাব থেকেও অর্থ ছাড় না করায় চাইনিজ প্রকৌশলীদের বেতন দেওয়াসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে সাড়া না পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে ১২ আগস্ট। তারপরও কোন সুরাহা করা হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গর্ভণরকে চিঠি দিয়েছে কোম্পানিটি।

বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত। যে কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লিস্টকস্ট জেনারেশনের তালিকায় সবার আগে থাকে বাঁশখালীর নাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে জ্বালানি খরচ হয় প্রায় ৭.৫৬ টাকার মতো। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ফার্নেস অয়েল দিয়ে সরবরাহ দিতে গেলে পড়বে প্রায় ১৮ টাকার মতো। ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে করলে মাসে প্রায় ৯৫ কোটি বিদ্যুৎ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে পারে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল থেকে পেতে হলে সরকারকে বাড়তি ৯৫০ কোটি টাকা গুণতে হবে। যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হড়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু আর্থিক দিক থেকে নয় কারিগরিভাবেও ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া বেশ জটিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *