আজ শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজ :-
এমপিওভুক্ত হওয়ার দাবি নিয়ে সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গনি রোড অবরোধ করে রাখার সময় বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
সেখানে একজন পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রাখার পর এক শিক্ষককে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের ব্যানারে তিন দিনের কর্মসূচির তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
সংগঠনটির সভাপতি নেকবর হোসেনের অভিযোগ, বিকেলে তারা সড়ক অবরুদ্ধ করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, জল কামান ব্যবহার এমনকি লাঠিপেটা করেছে।
এই ঘটনায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যাতে দেখা যায় সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকা এক শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সেই শিক্ষক তখন এক পুলিশ সদস্যের পায়ে ধরে উচ্চশব্দে চিৎকার করে কান্না করতে থাকেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন চার জন পুলিশ সদস্য, তারা সেই শিক্ষকের হাত পুলিশ সদস্যের পা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তারা সেটি পারছিলেন না।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি নেকবর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ বাহিনী আমাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। টিয়ারশেল ও জল কামান মেরেছে। অনেক শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে। কারও কারও পা ভেঙে দিয়েছে। পরে আহত সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনদিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েও কোনো সমাধান না এলে, আমরা রাস্তা অবরোধ করি। এতে আমাদের সমাধানের পথে না গিয়ে উল্টো শিক্ষকদের মারধরের পথে যাওয়া হল।”
সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষকের পক্ষে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ তে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষকরা এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষকদের এই নেতা।
তবে লাঠিপেটার অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ।
শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর বলেন, “তারা আধা ঘণ্টা-পৌনে এক ঘণ্টা সচিবালয়ের রাস্তা পুরোটা আটকে রেখেছিল। এতে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। জনসাধারণের যাতায়াতে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। তাদেরকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুনেননি। পরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়।”
শিক্ষকরা জানায়, নিয়োগ পাওয়ার দীর্ঘ সময় পরও এমপিওভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ৩২ বছর পরও এ সুবিধা পাচ্ছেন না। বর্তমানে তারা যে বেতন পান, তাতে সংসারের ব্যয় সামলাতে পারছেন না। তাদের কেউ কেউ পাঁচ হাজার বা ছয় হাজার টাকাও সম্মানী পান।
খুলনা থেকে আসা কলেজ শিক্ষক উত্তম কুমার মণ্ডল বলেন, “আমরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। এমপিওভুক্ত হলে অন্তত আত্মসম্মান নিয়ে অনটন কিছুটা কাটিয়ে বাঁচতে পারব, সেই আশায় ঢাকা এসেছিলাম।”
শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি ছাড়াও সহকারী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতিসহ বিভাগীয় প্রধান, প্রশিক্ষক, উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ চাইছেন।
দাবির পক্ষে ‘যুক্তি’
শিক্ষকরা বলছে, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক আর্থ-সামাজিকভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একই কলেজে একই নিয়ম ও যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন আর কিছু শিক্ষক নন-এমপিও, যা বৈষম্যের।
>> অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের ‘জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায়’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একাধিকবার নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করেনি।
>> মাদ্রাসায় কামিল শ্রেণি (যা মাস্টার্সের সমমান) এমপিওভুক্ত হলে সাধারণ শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স কোর্সকে এমপিওভুক্ত করা সময়ের দাবি।
>> বছরে ১০৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেই সাড়ে তিন হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব।
>> রিট আবেদন করা হলে হাই কোর্ট বিভাগ এমপিওভুক্তির আদেশ দেয়। তবে ফেডারেশনের অভিযোগ, কোনো শুনানির সুযোগ না দিয়ে আপিল বিভাগ ওই রায়কে বাতিল করে দেয়।
কলেজ শিক্ষক বাবার দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে ছোট্ট প্রীতিও