এক বছরের মধ্যে অর্থনীতির চেহারা পাল্টে ফেলতে পারব : গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

ডেস্ক নিউজ :-

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমাদের প্রথম দায়িত্ব দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা। মূল্যস্ফীতি ৫-৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসা।

ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকার আশপাশে স্থির রাখা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটু স্থিতিশীল করে আস্তে আস্তে বাড়ানো। অপরিশোধিত বিলগুলো পরিশোধ করে শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়া।

বিশ্ববাজারের কেউ যাতে বলতে না পারে বাংলাদেশ পেমেন্ট দিতে পারে না। আমি মনে করি, এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে ফেলতে পারব। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক নাজুক অবস্থায় আছে। তবু যার যেখানে আমানত আছে সেখানেই রাখুন। আপনার পুরো টাকা সুদাসলসহ ফেরত পাবেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, পুরোপুরি স্থিতিশীল হতে কতদিন লাগবে?

আহসান এইচ মনসুর: জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা বহুলাংশে চলে এসেছে। এখন আমাদের ধারাবাহিকভাবে একটি ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। আগে নীতিগত ভুলভ্রান্তির কারণে মূল্যস্ফীতি কমার বদলে বেড়ে গিয়েছিল। এখানে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। দুই বছর ধরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে একটা বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা আছে। এটা সামাল দিতে হবে। আশা করছি, এক বছরের মধ্যে অর্থনীতির চেহারা পাল্টে ফেলতে পারব।

প্রশ্ন: বাজারে গেলে পানির মতো টাকা চলে যাচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে, কবে নাগাদ কমতে পারে মূল্যস্ফীতি?

আহসান এইচ মনসুর: আগামী মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতি আরও একটু কমে আসবে বলে আমি আশাবাদী। অফিশিয়ালি আমাদের টার্গেট হচ্ছে চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। আশা করছি, এপ্রিল-মের মধ্যেই লক্ষ্য পূরণ হবে। তার পরে আমরা ৬ অথবা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি, তাহলে অবশ্যই সুদহার কমিয়ে আনতে পারব। সুদহার কমে এলে বাজারে একটা চাহিদা তৈরি করে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে পারব। প্রবৃদ্ধির দিকে আমরা নজর দিতে পারব। আমরা নীতি সুদহার বাড়িয়েছি। বিদ্যমান নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মাসে সেটা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নিয়ে যাব, পরবর্তী মাসে ১০ শতাংশে নিয়ে যাব। এটা আমাদের পূর্বপরিকল্পনা। আগামীতে কাজ হবে কি হবে না সেটা দেখব। দেখার পরে ভবিষ্যতে বাড়ানোর দরকার হলে বাড়াব। না হলে আমরা ওখানেই থেমে যাব।

প্রশ্ন: উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

আহসান এইচ মনসুর: সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় এবং কঠিন সমস্যা মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি বড়লোককে আরও বড়লোক করে, গরিবকে গরিব করে। যাদের সম্পদ আছে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়। যারা আয়ের ওপর নির্ভরশীল তাদের আয়টা কমে যায়। ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। আমাদের লক্ষ্য চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসা এবং পরে ৪-৫ শতাংশে নিয়ে আসা। দেশের ইতিহাসে ৪-৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়নি। যদি আমরা করতে পারি, তাহলে সরকারের জন্য একটি বড় অর্জন হবে বলে মনে করি। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, করতে পারলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে। কীভাবে প্রকৃত মজুরি বাড়াতে পারি সেদিকেই নজর দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *