নিজস্ব প্রতিবেদক :–

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি এবং জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার নাদপাড়া গ্রামে এ ঘটনা। নাদপাড়া যুবমিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে আহত হন ৩৫ জন। আহতরা শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও হাতাহাতিতে জড়ান উভয়পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা যায়, স্কুল ম্যানেজিং অ্যাডহক কমিটি গঠনের সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই নাদপাড়া যুবমিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে নাদপাড়া গ্রামের বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। উপজেলা জামায়াতের আমির মতিয়ার রহমান ও সারুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নওশের বিশ্বাসের পক্ষের মধ্যে এ উত্তেজনা দেখা দেয়।

নাদপাড়া যুবমিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন কমিটি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় আজ দুপুরে তিনি উপজেলা জামায়াতের আমির মতিয়ার রহমানের পক্ষে একটি ও প্রবীণ বিএনপি কর্মী নওশের বিশ্বাসের পক্ষে আরেকটি কমিটি প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ এ নিয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন সেকেন্দার বিশ্বাস, আলিম বিশ্বাস, শাওন বিশ্বাস, বাচ্চু বিশ্বাস, ওমর ফারুক, রফিকুল ইসলাম, রবিউল বিশ্বাস, আনোয়ার হোসেন, তানভির হোসেন, মাসুদ, মেহেদী হোসেন, সোহেল, আলিম হোসেন, রবি হোসেন, শহিদুল ইসলাম, রিপন হোসেন, মনিরুদ্দিন, মনিরুল ইসলাম, রোজদার আলী, রতন বিশ্বাস, কলিমুদ্দিন, শাহীন এবং রুদ্রসহ ৩৫ জন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা জামায়াতের আমির মতিয়ার রহমান বলেন, নাদপাড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চাচ্ছে স্কুলের অ্যাডহক কমিটিতে তিনি সভাপতি হন। কিন্তু গ্রামের বিএনপি কর্মী নওশের বিশ্বাস তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করে আসছিলেন। এ নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজ দুটি কমিটি প্রস্তাব করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় নওশের বিশ্বাসের পক্ষ থেকে উস্কানিমূলক কথা বলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তবে ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে বিএনপি কর্মী নওশের বিশ্বাস বলেন, নাদপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে উপজেলা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কোনো সমঝোতা না হলে আজ দুটি কমিটি প্রস্তাব করেন প্রধান শিক্ষক। দুপুরে তার পক্ষের প্রস্তাবিত কমিটি স্কুল থেকে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরের জমা দিতে যাওয়ার সময় উপজেলা জামায়াতের আমিরের সমর্থকরা স্কুল ক্যাম্পাসে তাদের বাধা দেন। এ সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা একসঙ্গে তাদের ওপর হামলা চালান এবং তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেন।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক কর্মকর্তা সুলতান আলী বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন।

হাসপাতালে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের হাতাহাতি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে উভয়পক্ষের সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ এসে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।

শৈলকুপা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান সাংবাদিকদের বলেন, নাদপাড়া গ্রামের স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।’