আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১০ অপরাহ্ন
আওয়ার ডেইলি বাংলাদেশ ডেস্ক;-
কাজির গরু কেতাবে আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই এটা হচ্ছে বাঙালি জীবনের বহুল শ্রুত একটি প্রবাদ। আর এ প্রবাদের যেন বাস্তব উদাহরণ ঝালকাঠির রাজাপুরের ১২১ নম্বর নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী, আছে অবকাঠামো, আলমারি, চেয়ার-টেবিল ও শিক্ষাসামগ্রী। শুধু নেই কোনো শিক্ষার্থী। তবে বিভিন্ন শ্রেণির হাজিরা খাতায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি। অভিযোগ আছে, অডিটের সময় মাদরাসা থেকে ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আসা হয় বিদ্যালয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই একজনও শিক্ষার্থী। অফিস কক্ষে গল্পে মশগুল পাঁচ শিক্ষক শিক্ষিকা। স্থানীয়রা জানান, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শুধু কাগজ-কলমেই আছে। বাস্তবে এটাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে মনে হয় না। কারণ এখানে শিক্ষক আছে তবে তেমন কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রতিদিন শিক্ষকরা সকালে স্কুলে এসে হাজির দেয়। এরপর ছুটির সময় শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যায়। স্কুলে অডিটের সময় পার্শ্ববর্তী সিরাতুন নবী (স.) মডেল মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের এনে এই স্কুলের শিক্ষার্থী দাবি করে দেখানো হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজিস্ট্রার ও কাগজপত্রে ৫১ জন দাবি করলেও শ্রেণিকক্ষের হাজিরা খাতায় ৫৪ জনের নাম পাওয়া যায়। তবে নিয়মিত হাতে গোনা ৩ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসলেও প্রতিদিন হাজিরা খাতায় উপবৃত্তির জন্য শতভাগ উপস্থিতি দেখানো হয়
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. ফাতিমা বেগম জানান, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম, তবে নিয়মিত ৩ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী আসে। কিন্তু হাজিরা খাতায় উপবৃত্তির ক্ষেত্রে সবাইকে উপস্থিতি দেখানো হয়। তবে কেনো দেখানো হয় সেটা তিনি জানেন না। উপবৃত্তি দিলেও তারা কেন স্কুলে আসে না এবং ৩০ তারিখে হাজিরা খাতায় কেন হাজিরা নেয়া হলো না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের টিফিনের বিরতিতে অফিস কক্ষে বসে হাজিরা দিয়ে দেই। আজকে কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় হাজিরা নেয়া হয়নি। ওরা নূরানী মাদরাসায় যায়, আমরা তো ওদের জোর করতে পারি না।
সিরাতুন নবী (স.) মডেল মাদ্রাসা ও এতিম খানার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ১২১ নম্বর নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আমার মাদরাসায় পড়ে না। বরং যখন ওই স্কুলে অডিট আসে, তখন আমার মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের স্কুলের বলে কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজম খান জানান, স্কুলে শিক্ষার্থী না থাকলে নাই, অসুবিধা কী? আমরা তো আর কোথাও নিয়ে রাখি নাই। স্কুলের শিক্ষার্থী পার্শ্ববর্তী নূরানী মাদরাসায় পড়ে, যার জন্য স্কুলে আসে নাই।’ তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কেন নূরানী মাদরাসায় পড়ে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আরবি পড়ার জন্য ওই মাদরাসায় যায়।’
রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন জানান, এরকম উপজেলায় ৩ থেকে ৪টা স্কুল রয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য সুপারিশ করা হবে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক কুমার সমাদ্দার বলেন, আমি বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের এটিওকে স্কুলটি ভিজিট করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলে দিচ্ছি। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।