আজ বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :–
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নতুন গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৫ সালেই হতে পারে অনেক প্রত্যাশার এ নির্বাচন। শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার বক্তব্যেও নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভাবনা ফুটে উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নানামুখী চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে রোডম্যাপ ঘোষণাসহ দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠেছে। দ্রব্যমূল্য, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কঠিন চ্যালেঞ্জে সরকার। এই বাস্তবতায় সরকারের ভিতরেও নির্বাচন প্রশ্নে দ্রুততার তাগিদ তৈরি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টার বক্তব্যে আগামী বছরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত মিলেছে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই আলোকে তারা রাজনৈতিক মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনি জোট নিয়েও চলছে দেনদরবার। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করছে ইসি।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে আগামী বছরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছরই আমরা একটা রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখব।’ যদিও তিনি বলেছেন, ‘(এটি) আমার ব্যক্তিগত মতামত। জানি না কী হবে।’ গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এবিসিডি সম্মেলনের প্রথম সেশনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কমিটমেন্ট ছিল বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তবে সংস্কারের কথা বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সংস্কার করা। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে, নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথা সম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা।’
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমরা কোনো টাইমফ্রেম কিংবা চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। তবে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত। সরকার আন্তরিক হলে সেটি শুধু ২০২৫ সালের মধ্যেই নয়, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে আমরা শুনেছি, আগামী বছর নির্বাচন হবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) মুখ থেকে যখন ঘোষণা দেওয়া হবে, তখন নির্বাচন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বারবার সংস্কার ও রাজনৈতিক রোডম্যাপ চেয়েছি। সংস্কার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, কোনটা কখন করা হবে, সেটা পরিষ্কার করা এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ করার ব্যাপারে ছাত্র-জনতা ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার কথা বলে এসেছি।’
গত ২৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, আগামী নির্বাচন কবে হবে, তা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে। এ নিয়ে বাকি যাঁরা কথা বলছেন, সেগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ : চলতি বছরের নতুন ভোটারদের যুক্ত করে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর আগামী বছরের ২ মার্চের পর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে সাংবিধানিক এই সংস্থটি। তারা ২০২৬ সালের ২ মার্চের চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সবশেষ গত ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে নতুন ভোটার যুক্ত হবে প্রায় ১৭ লাখ। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হবেন, এ বছরের হালনাগাদের সময় তারা যুক্ত হবেন।