আজ রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

Logo
News Headline :
কমলগঞ্জে ট্রাক্টর উল্টে ইট চাপায় চা শ্রমিক নিহত, আহত-২ যুবলীগ নেতা মাসুক গ্রেফতার দ্বিতীয়বারের মতো ‘মাদার তেরেসা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন তরুণ ও প্রতিবাদী সাংবাদিক মুজাহিদ হোসেন পিরোজপুরে বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি খাল উদ্ধারে ইউএনও’র অভিযান   কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানা যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত।। দখলকৃত সব নদী-খাল ভূমিদূস্যদের কাছ থেকে উদ্ধারের দাবি রাইট টক বাংলাদেশের মানববন্ধন করে মুফতি ফয়জুল করিমকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবি ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক ” স্লোগানে পিরোজপুরে প্রতিবাদ মিছিল  পুলিশের মাসিক কল‍্যান সভায় শ্রেষ্ট অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ  নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য ডিবির অভিযানে ঢাকায় গ্রেফতার
ভূরুঙ্গামারীতে ১৬ বছর পর ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি ফিরলেন ফজলু

ভূরুঙ্গামারীতে ১৬ বছর পর ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি ফিরলেন ফজলু

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফজলুর রহমান। তার পিতার নাম মৃত শাহার আলী। দেশ সেবার ব্রত নিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ রাইফেলসে। যৌবনের দিনগুলো কেটেছে দেশের সীমান্ত রক্ষায় চৌকস সিপাহী হিসেবে। সিপাহী থেকে ল্যান্সনায়েক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল বিডিআর হেডকোয়র্টার পিলখানায় থাকায় ফেঁসে যান ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায়। প্রহসনের বিচারে ১৬ বছর কারাভোগ করে সদ্য জামিন পান তিনি। 

গত ২৩ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ২৪ জানুয়ারি ভারসাম্যহীন অবস্থায় তার নিজ বাড়িতে ফিরেছেন ফজলুর রহমান। এসময় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা সৃষ্টি হয়। দলে দলে তাকে দেখতে আসে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গ্রামবাসী। এখন মুক্ত হলেও ফজলুর রহমান কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।

স্বাভাবিক কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে তার। ৭ ভাই বোনের মধ‍্যে ফজলুর ৩য়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুক্ত বাতাসে স্বামীকে ফিরে পেয়েও স্বামীর শারীরিক অবস্থা আর চাকরি না থাকায় সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে এ নিয়ে শঙ্কায় তার স্ত্রী। 

কারাভোগের ১৬ বছরে তিনি হারিয়েছেন প্রিয় মা-বাবা, বোনসহ ৯জন নিকটাত্মীয়। বিনা দোষে জেল, প্রিয়জনদের হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। অনেকে তার সাথে দেখা করতে আসলে নির্বাক তাকিয়ে থাকছেন তিনি। দীর্ঘ ১৬ বছর অপেক্ষার পর স্বামীকে কাছে পেয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না স্ত্রী রাশেদা খাতুনের। ১৬ বছর অসহনীয় দুঃখ, কষ্ট আর গ্লানি নিয়ে চলতে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। এমনকি কারাগারে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারেননি তারা।

আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদা। তিনি জানান, ১৬টি বছর সমাজের নানা সমালোচনা সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। নিজের সন্তান না থাকায় ননদের সন্তানকে নিয়ে মানুষ করেছে। ছোট থেকেই সেই মেয়ে তার বাবাকে (ফজলুর রহমান) খুঁজেছে, আমি কোনো উত্তর দিতে পারি নাই। এখন স্বামী ফিরে আসলেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অনেককে চিনতে পারছে আবার অনেককে চিনতে পারছে না। আবোল তাবোল বলছে। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো। 

ফজলুর রহমানের বড় ভাই ছামাদ আলী বলেন, সংসারে অভাব অনটন থাকায় ফজলুর রহমানের লেখাপড়া বন্ধ করে বিডিআরে পাঠাই। সে খুব ভালো ছিল, ছোট দুই ভাইকে তার অনুপ্রেরণায় সেনাবাহীনিতে দেই। ফজলুর রহমান দেশের জন্য কাজ করেছে। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারি নাই। ১৬ বছর ভাই কারাগারে ছিল আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। মানুষ আমাদের ঘৃণার চোখে দেখেছে। এই কয়েক বছরে আমাদের বাবা-মা, এক বোনসহ ৯জন নিকট আত্মীয় মারা গেছে  ও দেখতে পারে নাই।

ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইউসুফ আলী জানান, বড় ভাই ফজলুর রহমানের অনুপ্রেরণার আমরা দুই ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেই। সেই পরিবারের সদস্য হয়েও আমার ভাইকে বিনা দোষে ১৬ বছর কারাভোগ করতে হলো। ১৯ তারিখের যে জাজমেন্ট ছিল সেটাতে আমরা খুশি। আমাদের ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তবে ভাইয়ের চাকরি নাই। এখন অসুস্থ। কিভাবে তার সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। সরকারের কাছে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয় আনিছুর রহমান ও তাসলিমা খাতুন জানান, ১৬ বছর এই পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক দুঃখ কষ্ট গেছে। এখন ফজলুর ভাই ফিরে আসলেও রোগে শোকে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা দরকার। সরকারকে তার চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন করতে হবে।

ফজলুর রহমান বলেন, এ মামলার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে মুক্ত হয়েছেন তিনি। ১৬ বছরে বাবা-মা, বোন মারা গেছেন, ২ ফুফু মারা গেছেন, জ্যাঠা-মামাসহ আরও কয়েকজন নিকট আত্মীয় মারা গেছেন তাদেরও দেখতে পারি নাই। তাদের তো আর ফিরে পাব না। তাদের না দেখার কষ্ট নিয়েই থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার চাকরিটাই ছিল একমাত্র সম্বল। এখন তো চাকরিটাও নেই। সরকারের কাছে দাবি আমাদের পুনর্বাসন করুক। সরকার চাইলে এটা করতে পারে। পুনর্বাসন হলে আমার আর চাওয়ার কিছু নাই।

Please Share This Post in Your Social Media

All rights reserved © 2024 ourdailybangladesh.com