আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ মামুন সেখ
জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ৷
অতি শীঘ্রই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর উপর নব নির্মিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু৷ এরমধ্যে গত ২৬ শে নভেম্বর যমুনা রেলওয়ে সেতুর পূর্ব পাশ ভূঞাপুর থেকে যমুনা রেলওয়ে সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্ত ট্রেন ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে৷ আশা করা যাচ্ছে জানুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যায়েই উদ্বোধন করা হবে৷
রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকায়। যার ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা জাপানের ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। পরে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আগে আলাদা কোন রেলওয়ে সেতু ছিলো না৷ একই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল পাশাপাশি ট্রেন ও চলতো৷ যেখানে কি না ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার এর বেশি গতিতে চালানো সম্ভব হতো না৷ আর আমাদের সময় অনেকটাই ব্যয় হতো যার ফলে বিকল্প হিসেবে আমরা গাড়ি ব্যবহার করতাম৷ জানুয়ারিতে রেলওয়ে সেতুটি উদ্বোধন হলে এই সেতু দিয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে চালানো সম্ভব হবে৷ যেখানে কি না আমাদের সময় অনেকটা কম লাগবে৷ তখন আমরা আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল গুলো অতি সহজেই পরিবহন করতে পারব৷ যাতে করে আমাদের সময় ও বেচে যাবে অপর দিকে বহন খরচ ও তুলনামূলক অনেক কম হবে৷ যাতে করে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে৷
প্রকল্প পরিচালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, যমুনা নদীর উপর নির্মিত ৪.৮ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর কাজ প্রায় শেষ৷ গত ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু ৩ বগি বিশিষ্ট একটি ট্রেন ট্রায়াল দেওয়া হয়৷ সেটা বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পূর্ব পাশ ভূঞাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যমুনা রেলওয়ে সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালানো হয়৷ যেটা যথাক্রমে প্রথমে ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে ট্রায়াল করা হয়৷ পরবর্তীতে ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার এবং তার পরবর্তী সময়ে ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ট্রেনটি ট্রায়াল করা হয়৷ আরো জানান যে আমরা আমরা ট্রায়াল করার সময় কোন ত্রুটি দেখতে পাইনি৷ সুতরাং আমরা আশা করছি যে ২০২৫ সালের জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করতে সক্ষম হবো৷
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সেতুটি উদ্বোধন হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেলওয়ে যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা আছে, সেটা আর থাকবে না। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে।