আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১১ নং মোস্তফুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি শেখ রুমেল আহমেদের বাড়িতে আগুনে পুড়ে তাঁর মা মেহরুন নেসা (৬৫) ও চাচী ফুলেছা বেগম (৬০) মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও লোকমুখে নানা আলোচনা চলছে। ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে কেউ আগুন লাগিয়েছে,নাকি নিছক দুর্ঘটনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। কেউ বলছেন,ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আগুন লাগানো হয়েছে।
আত্মগোপনে থেকে শেখ রুমেলও সোমবার ফেসবুকে একই দাবি করেছেন। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ, সিআইডির বিশেষ দল অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে।
শেখ রুমেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইস্যুতে দায়ের করা কয়েকটি মামলার আসামি। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর অপর ভাই-বোনদের অনেকে প্রবাসী ও মৌলভীবাজারের বাইরে অবস্থান করেন। ফলে মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ওই ডুপ্লেক্স বাড়িতে শুধু তাঁর মা মেহেরুন্নেসা ও চাচিই একা থাকতেন।
শেখ রুমেল আহমেদ তার ফেসবুক আইডিতে মা, চাচির কফিনে রাখা লাশ এবং পোড়াঘরের ১৯টি ছবি আপলোড করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজ মৌলভীবাজারের ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হলো। আল্লাহ আপনাদের আরও শক্তি দিক, আপনারা জুলুম করতে থাকেন। দুটি মায়ের জীবন কেড়ে নিলেন, আপনাদের নোংরা রাজনীতির মেটিকুলাস মিলাতে গিয়ে। আল্লাহ-তায়ালার আরশে আজিমে পৌঁছাক আর আরশে আজিম থেকেই ফয়সালা হোক।’
মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার যীশু তালুকদার জানান,ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। উদ্ধার হওয়া দুই মৃতদেহের কোথাও পোড়া ক্ষত দেখা যায়নি।
মোস্তফাপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ জানান, শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগানোর অভিযোগ গুজব ছাড়া কিছু নয়। ময়নাতদন্ত শেষে ৮ ডিসেম্বর দুই নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে।
বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড আরজান মিয়া জানান রাত দুইটার সময় হঠাৎ ঘরের ভিতরে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে তিনি বাড়ির চতুর্দিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন এবং বাড়ির পাশের ঘরের লোকজন কে ডাকাডাকি করেন কেহ সাড়া না দেওয়ায় তিনি বাড়ির মূল গেট খুলে আরো জোরে জোরে চিৎকার চেচামেচি করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে বাড়িত নাইটগার্ড আরজান মিয়া ছিলেন। আগুনে আক্রান্ত ঘরের পাশে কাটা ধানের বেশ কিছু আঁটি ছিল। প্রতিবেশী এখলাছ মিয়া জানান, ৭ ডিসেম্ব রাতে বাড়ির পাহারাদার আরজানের আগুন লাগার চিৎকারে ঘুম ভাঙে। এসে দেখি ঘরের ভেতরে আগুন জ্বলছে আর ধোঁয়ায় একাকার। এ অবস্থায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা এসে জানালার কাচ ভেঙে পানি মারতে থাকে। দরজা ভেঙে ও কলাপসিবল গেট কেটে ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা করে। এরপর অচেতন অবস্থায় মেহেরুন্নেসা ও কুটি বেগমকে বের করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের তথ্য অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ ও সিআইডির বিশেষ দল কাজ করছে। তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকলে বেরিয়ে আসবে। পেট্রোলের গ্যালন পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ট্যাঙ্ক পাওয়া যায়নি। ১০টার পরে কেউ হয়তো রেখে যেতে পারে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির এসপি নুতান চাকমা বলেন, শেখ রুমেলের বাড়িতে আগুনের ঘটনার তদন্তে এখন পর্যন্ত নতুন তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে ।