আজ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

Logo
আগামী বাজেটে সিগারেটের দাম আরও বাড়ানোর দাবি

আগামী বাজেটে সিগারেটের দাম আরও বাড়ানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :–

২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সমন্বয় নামের একটি সংগঠন। ওই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ৩২ শতাংশ ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেট আরও সহজলভ্য হয়েছে। তাই আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে সব স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরজুড়ে যেহেতু গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে তাই আসন্ন অর্থবছরের বাজটে সব স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে। ১৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় সিগারেটের দাম বাড়াতে হবে।

এছাড়াও কর আহরণ সহজীকরণের জন্য বাজারে বিক্রি হওয়া সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার পাশাপাশি সিগারেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ২০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সিগারেটে কর প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, সিগারেটে কার্যকর করারোপ হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, সিগারেট শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা কর্মসংস্থান হারাবে ইত্যাদি নানাবিধ অপপ্রচার চালানো হয় স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষ থেকে। আগেই বলা হয়েছে, সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার তুলনায় সিগারেট ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। তাছাড়া কার্যকর করারোপ করলে মধ্যম মেয়াদে সিগারেট বিক্রি থেকে পাওয়া কর কমবে না বরং বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্যমতে দেশে তামাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার যা মোট কর্মে নিয়োজিত নাগরিকের সংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশ। আর প্রতি বছর কেবল আনুষ্ঠানিক খাতেই বাংলাদেশে দুই লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। কাজেই সিগারেটে কার্যকর করারোপের ফলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাটি পুরোপুরি অমূলক। আসন্ন অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের আলোচনা ও নীতি-ভাবনার সময় এসব অপপ্রচার বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা একান্তভাবে কাম্য।

তিনি বলেন, সিগারেটের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলোর ওপর কার্যকর করারোপও জরুরি। কার্যকরভাবে করারোপ না করা হলে সিগারেটের দামবৃদ্ধির ফলে সিগারেট কোম্পানিগুলোর বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত সময়কালে যেহেতু বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু এগুলোর দামের ওপর শতাংশ হিসেবে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা আছে- তাই এ সময়ের ব্যবধানে সিগারেট থেকে আসা বার্ষিক করের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে বছরে মোট সিগারেট বিক্রির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৩৫ হাজার ১৬৭ কোটি থেকে বেড়ে ৪৭ হাজার ৩০৭ কোটি হয়েছে।

তিনি বলেন, হিসেব করে দেখা যায় এ সময়ে সিগারেট উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীদের পাওয়া মোট অর্থের পরিমাণ বছরে গড়ে ২.৬৫ শতাংশ করে বেড়েছে। যদি কার্যকরভাবে সিগারেটের ওপর করারোপ করা যেত তাহলে সিগারেট উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীদের আয় বাড়তো না। বরং তাদের পাওয়া বাড়তি অর্থও সরকার রাজস্ব হিসেবে আহরণ করতে সক্ষম হতো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য এবং তামাক-বিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরের প্রতিটিতে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব আহরণ করেছে, তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর দাবি অনুসারে কার্যকর করারোপ করা গেলে তার তুলনায় ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রাজস্ব আয় করা সম্ভব হতো। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে প্রতি বছর গড়ে ৬,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সব স্তরের সিগারেটের দাম প্রতি শলাকায় ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং এগুলোর ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ০.৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে করে আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আহরণ করা যাবে সিগারেট বিক্রি থেকে। তবে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ালে আগের বছরের তুলনায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যেতো।

সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ বলেন, অনেকেই ছোট ছেলেমেয়ের সামনে ধূমপান করেন। এতে কিন্তু তারা আগ্রহী হয়ে আসক্ত হয়ে যায়। আগে কিন্তু স্কুল কলেজে ছাত্রদের সিগারেট খেলে তাদের টিসি দেওয়া হতো। এটা যদি চালু থাকে তাহলে কিন্তু সিগারেটের প্রতি আসক্তি কমে। আর আমার মনে হয় সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করার ফলে এর ব্যবহার অনেকাংশেই কমে আসবে। আগে যারা পাঁচটা সিগারেট খেতেন তারা কিন্তু সেটা কমিয়ে তিনটায় চলে আসবে। এভাবেই এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আবা সম্ভব।

সাবেক জাতীয় ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, আমি মনে করি পরিবার যদি একটা সুন্দর শিক্ষা দিতে পারে তাহলে আমার মনে হয় অনেকাংশে ধূমপান কমে আসবে। সিগারেট খাওয়ার নির্ধারিত স্থান ঠিক করে আইন করে দেওয়া যায় তাহলেও কিন্তু ধূমপান কমে আসবে। কেবল ভ্যাট ট্যাক্স বাড়িয়ে না পরিবার ও নিজেদের শিক্ষা থাকলে এবং এর বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখলে কিন্তু ধূমপান কমে আসবে বলে আমি মনে করি।

সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

All rights reserved © 2024 ourdailybangladesh.com