আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জামায়াত নেতা আলহাজ্ব মাসুদ সাইদী বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা এই বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের জন্য আমারা ৫৬ হাজার মাইলের মানচিত্র পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারাই বাংলাদেশ। তারা এই জাতির মানচিত্র। একক ব্যক্তি বা দলের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়নি। একটি দল তাদের নেতাকেই একমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। এই মিথ্যা দাবির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মূলত ত্রিশ লক্ষ শহীদের বীরত্বগাথা ভূমিকাকেই অবমাননা ও অপমান করেছে। আওয়ামী লীগ ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ বানিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নির্দোষ দাবি করেন মাসুদ সাঈদী। এসময় তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী আওয়ামী লীগের ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার। তাকে ষড়যন্ত্র করে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
মাসুদ সাঈদী উপস্থিত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশ্যে বলেন, এই আপনারাই সাক্ষী, পিরোজপুরের একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের কোনো অভিযোগ করেনি বরং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অসৎ কিছু লোককে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে ট্রাাইবুনালে আল্লামা সাঈদীর মতো একজন নির্দোষ আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করে মূলত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই অপমান করেছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টায় পিরোজপুর পৌরসভা কর্তৃক পিরোজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে যেসব বীর সন্তান পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন, জাতি চিরদিন তাদের কথা স্মরণ করবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা এখন সমাজ ও জাতীয় জীবনে কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনার সময় এসেছে। বিগত দিনে সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা কতটা মর্যাদা দিয়েছে? শহীদ বুদ্ধিজীবী, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা কোনো সরকার এখনও প্রকাশ করলো না? কেন নতুন কোনো সরকার ক্ষমতায় এলেই আবার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে ?
লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে আগে। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশবাসীকে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছিল, সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা কতটা সফল? বৈষম্য এখনো রয়েছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। দুর্নীতি আমাদের সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারন করেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ২৪ এর চেতনাকে আমাদের ধারন করতে হবে। বিজয় দিবসের প্রকৃত অর্থ তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য সমান অধিকার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবো।
আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। একাত্তরের বিজয় আমাদের পথ দেখিয়েছে। এখন প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে একটি প্রকৃত বৈষম্যহীন কল্যাণময় বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বিজয়কে অর্থবহ করতে হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটি দেশ রেখে যেতে হবে, যেখানে তারা গৌরবের সঙ্গে বলতে পারবে—আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং বিজয়ের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছি এবং সেটিকে রক্ষা করতে পেরেছি।
পিরোজপুর পৌরসভা প্রশাসক মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী আখতার আহমেদের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসাইন ফরিদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম হোসেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির জেলা সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জহিরুল হক, পৌর কাউন্সিলর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন প্রমুখ।