আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজ :-
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পল্লী বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬২ টাকা। বিল পরিশোধ না করায় জরিমানা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
বিল পরিষদের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একাধিক চিঠি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জরিমানাসহ বিল আসে ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৩০৮ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বকেয়া বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৪ টাকা।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বরাদ্দ হয় ৯০ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্রে জানা যায়, বকেয়া বিলের জরিমানা ও বকেয়া বিল পরিশোধ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগে বিল পরিশোধ না করে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান মাসের বিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবে, কিন্তু বিগত দিনের জরিমানা দিতে হবে।
এদিকে প্রায়ই দিনে হলের বা রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট জ্বালতে দেখা যায়। প্রায়ই বিভিন্ন দপ্তরে লোকজন না থাকলেও চলে ফ্যান ও লাইট। আবাসিক হলের খাবারের মান বাজে ও দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই অবৈধভাবে রাইস কুকার, কারি কুকার, হিটার ব্যবহার করে রান্না করেন। এসব কারণেও বিদ্যুৎ বিল বেশি ওঠে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরির বিদ্যুৎ বিল যিনি থাকবেন তার দেওয়ার কথা। এ জন্য প্রত্যেক ফ্ল্যাটে আলাদা আলাদা মিটারও রয়েছে, কিন্তু তারা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন না। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ নেওয়া হলেও হলের বিল দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান ভার্সিটি কর্নারে ৩টি ফটোকপি মেশিনসহ কম্পিউটার-প্রিন্টার চালানো হলেও নিয়মিত বিল দেন না। এই প্রতিবেদক দোকান পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত সেপ্টেম্বর মাসে একসঙ্গে ৯ মাসের বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু ৯ মাসের বিলের পরিমাণ ৮ হাজার ২০০ টাকা। ৩টি ফটোকপি মেশিন, ৪টি প্রিন্টার, কম্পিউটার চালালেও এত কম টাকা বিল আসে কীভাবে, এটাও প্রশ্নের বিষয়।
ভার্সিটি কর্নারের পরিচালক মো. মিলন বলেন, ‘আমি ৬ মাস পরপর বিল পরিশোধ করি। এবার আন্দোলনসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে পরিশোধ করা হয়নি। বন্ধের সময় দোকান বন্ধ থাকে, তাই বিল বেশি ওঠে না।’
ডরমিটরি বরাদ্দ কমিটির সদস্যসচিব মুর্শিদ আবেদিন বলেন, ‘আমরা শুধু আবেদনের ভিত্তিতে ডরমিটরি বরাদ্দ দেই। বিদ্যুৎ বিলের বিষয় দেখা স্টেট শাখার কাজ।
বকেয়া বিলের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিকস, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিসিটি) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সরকার দুই বছর ধরে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়নি। অন্যদিকে বাজেট না বাড়লেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। তাই অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বিল বকেয়া পড়েছে।’
মামুনুর রশিদ আরও বলেন, ‘আইন অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি প্রতিষ্ঠান দুই বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখলে জরিমানা দেওয়া লাগবে না। তাই তারা আমাদের থেকে জরিমানার টাকা পাবে না। এ বিষয় উপাচার্য ম্যাম তাদের সঙ্গে বসেছেন। চলতি বছরের তিন মাসের বিল পরিশোধের জন্য অর্থ দপ্তরে ফাইল পাঠিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার উপপরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে অর্থ ছিল না তাই বিল দিতে পারিনি। এখন টাকা আছে। আমরা ফাইল পেলে বিল পরিশোধ করব।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিনের সঙ্গে সরাসরি ও মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।