আজ মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
নিজেস্ব প্রতিবেদক
সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) ‘অতিরিক্ত জনবল’ দেখিয়ে বগুড়ার কারখানা থেকে ৫৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চাকরিচ্যুতরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির সময় তাদের বলা হয়, আজ রবিবার থেকে তাদের আর অফিসে আসতে হবে না। তাদের অভিযোগ, তারা প্রত্যেকেই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে এই কোম্পানিতে চাকরি করছেন। কিন্তু ‘আওয়ামী রাজনীতি করছেন’ ট্যাগ দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করা হলো।
কারখানায় কর্মরত আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন, সিনিয়র ক্লার্ক আমিনুল হক লোকমান জানান, তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে ছুটির পর পুলিশ ডেকে এনে ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলকে শ্রম আইনের ধারা-২৬ অনুয়ায়ী ১০ এপ্রিল থেকে চাকরিচ্যুত করা হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারী জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড মূলত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যখন যে সরকার আসে তখন তাদের নেতাকর্মী ও স্বজনদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে সবসময় প্রয়োজনীয় জনবলের অধিক কর্মরত থাকেন।
একটি টেবিলে চার-পাঁচ জন করে বসেন। অনেকে কাজ না করেও মাসে বেতন তোলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পার ঢাকা, বগুড়া, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ইডিসিএল কর্মরতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর শুরু হয় ছাঁটাই। চাকরিচ্যুতরা বর্তমান সরকারের মামলা ও গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন। তাই তারা চাকরিচ্যুতির ব্যাপারে কোনও প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। এমনকি সাংবাদিকদেরও বিষয়টি জানাননি।
ইডিসিএলের বগুড়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এখানে ২০১২ সাল থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। গোপালগঞ্জে বিএনপি পরিবারের সদস্য তিনি। তার বাবা এসএ সবুর ১৯৭৮ সালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। অথচ শুধু জেলা গোপালগঞ্জ হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের অনুসারী আখ্যা দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হলো।
এ বিষয়ে কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্ল্যান্টপ্রধান) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত জনবল দেখিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে ৫৪ জনকে টারমিনেশন করা হয়েছে। তবে বগুড়া কারখানায় এক হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কারখানার প্ল্যান্ট অনুযায়ী সাড়ে ৮০০ শ্রমিক-কর্মচারী প্রয়োজন। অন্য কারখানাগুলোতেও অতিরিক্ত জনবল রয়েছে।’
তবে কয়েক মাস আগে ৮৫ জন নতুন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইডিসিএলে নিয়োগ এবং শ্রমিক ছাঁটাই প্রধান কার্যালয় থেকে করা হয়। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।’