আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
খেলা ডেস্ক :-
তারকা তো সেই, যে কিনা সাধারণ মানুষদের থেকে একটু বেশি অসাধারণ। যারা শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, তারাই আমাদের সাধারণ চোখে হয়ে ওঠেন বড্ড বেশি অসাধারণ। তবে সেই কথা দিয়ে যদি বিচার করা হয় তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিকারের এক তারকার জন্ম হয়েছে। যে কিনা শত বাঁধা ও প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে ক্রিকেটকে বুকের মাঝে আকড়ে ধরে আছেন। তাকে আটকানোর সাধ্য যেন কারো নেই। ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ভালোবাসা এবং বুকের মধ্যে জমে থাকা অসীম সাহসই তাকে ক্রমশই যেন অদম্য করে চলেছে। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। তিনি আর কেউ নন, কোটি মানুষের প্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা।
আজ এই অদম্য ক্রিকেটারের ৩৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনেই অর্থাৎ ৫ অক্টোবর যশোরের নড়াইলে জন্ম হয় মাশরাফির। জন্মদিনে আওয়ার ডেইলি বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে তাকে জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা।
যশোরের নড়াইল উপজেলায় জন্ম তার। কারো কারো কাছে ম্যাশ, কারো কাছে তিনি মাশরাফি নামে পরিচিত হলেও নড়াইলের সেই দুরন্ত কিশোরটি ছোটবেলা থেকে কৌশিক নামেই এলাকার সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অদ্ভুত এক ভালোবাসা কাজ করতো। এমনও অনেক দিন গেছে যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে সমস্ত দিন খেলার মাঠেই পড়ে ছিলেন দুরন্ত সেই কিশোর। এজন্য অবশ্য বাবা মায়ের কাছ থেকে শাস্তিও কম পেতে হয়নি তাকে। তবে বাবা মায়ের শাসনের পাশাপাশি প্রিয় মামার সাহায্যই পেয়েছিলেন সবসময়। তাই তো ক্রিকেটটাকে এক মুহূর্তের জন্যেও দূরে ঠেলে দিতে হয়নি তাকে।
বয়স যখন ১৮ তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পন ঘটে এই তারকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টেস্ট ফরম্যাটে ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে মাশরাফির। সেই থেকে শুরু হয় আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিকেটের সাথে তার পথচলা। টেস্ট ক্রিকেটের ঠিক ক’দিন পরেই (২৩ নভেম্বর) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই একদিনের ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে তার। এরপর তার সুদীর্ঘ ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প। রয়েছে অনেক না পাওয়ার ব্যর্থতা। তবে কোটি কোটি মানুষের কাছে মহানয়ক একজনই, আর তিনি হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সাতবার পায়ে অপারেশানের জন্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অনেকগুলো বছর হারিয়ে গেছে মাশরাফির। তবে এতোকিছুর পরেও তিনি এখন পর্যন্ত ৩৬টি টেস্ট, ১৭৯টি ওয়ানডে এবং ৪২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ক্যারিয়ারে এতো উত্থান-পতনের পরেও ইনজুরি যেন বোলিংয়ে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি এই পেস অলরাউন্ডারকে। এখন পর্যন্ত ৩৬ টেস্টে মাশরাফি পেয়েছেন ৭৮টি উইকেট। অন্যদিকে ওয়ানডেতে ২৩২ এবং টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছেন ৪২টি উইকেট। ওয়ানডেতে এক ম্যাচে মাত্র ২৬ রান দিয়ে পেয়েছেন ৬টি উইকেট যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেটের দেখা না পেলেও ১৯ রান দিয়ে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবথেকে সফলতম অধিনায়কের মুকুটটি এখন পর্যন্ত মাশরাফির মাথাতেই শোভা পাচ্ছে। টেস্টে মাত্র একটি ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও সেই একটিতেই বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে অধিনায়ক হিসেবে তিনি কতোটা দক্ষ তা ওয়ানডে পরিসংখ্যান না দেখলে যেন সবকিছু ঘোলাটেই থেকে যাবে। ৩৭টি ওয়ানডের ২৩টিতেই জয় ধরা দিয়েছে টাইগার ক্যাপ্টেনের হাতে। অন্যদিকে ১৪টিতে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে তাকে। টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানটা ওয়ানডের মতো না হলেও অতোটা খারাপও না। ২৬টি টি-টোয়েন্টির ৯টিতে জয় এবং ১৬টিতে পরাজয় রয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পেছনের কারিগর যেন এই মাশরাফি। তাই তো পেয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসাও। শতবছর বেঁচে থাকুক মাশরাফি। হাজারো তরুণ ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা হয়ে। হাজারো ক্রিকেট ভক্তের ভালোবাসা নিয়ে।