আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ :-
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দলের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত রংপুরে দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা চুপসে গেছেন। তবে অস্তিত্বরক্ষায় তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। সেই সঙ্গে রাত জেগে দলীয় কার্যালয় পাহারা দিচ্ছেন।
এদিকে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে দল থেকে পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের পর রংপুরে জাপার অনেক নেতা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। অনেকের মধ্যে মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় রংপুরে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে জাপার একাধিক নেতা বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। এই দুর্গ কেউ ভাঙতে পারবে না।
জানা গেছে, রংপুর একটা সময় ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। তবে সেই দুর্গ এখন আর আগের অবস্থানে নেই। দলীয় কোন্দল, বিভক্তি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জোট গঠন, সাংগঠনিক দুর্বলতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণসহ নানান কারণে আস্থার সংকটে পড়েছে দলটি। দলটি ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে রংপুর বিভাগের পরিবর্তে রংপুর জেলাকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তবে জেলাতে আধিপত্য ধরে রাখা নিয়ে সংকটে পড়েছে দলটি। সাবেক সিটি মেয়র ও জাপার কো- চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় দলটি রংপুরে এখনো টিকে রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের পর থেকে রংপুরে দলীয় কার্যালয় পাহারা দিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।এদিকে রাজধানীতে দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিকান্ডে র প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে নগরীতে মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলীয় কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে একটি লাঠি মিছিল বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পায়রা চত্বরে জাপার কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে একটি সমাবেশ হয়। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির ওপর আস্থা আনায় একটি মহল ভিপি নুর, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তবে সব ষড়যন্ত্র রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তারা।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। এতে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা রংপুরে তাদের দুজনকে কোনো কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তবে এসব হুঁশিয়ারি পাত্তা না নিয়ে সারজিস আলম রংপুরে একাধিক প্রোগ্রাম করেছেন। এর প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে। এরপর থেকে দলটির ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষুব্ধ বলে ধারণা অনেকের।
অপরদিকে গত শুক্রবার রংপুর নগরীর দর্শনা মোড়ে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাবেক কাউন্সিলর মো. সাফিউল ইসলাম সাফী। এ সময় তিনি জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক পদ ও রংপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার মতো জাপার একাধিক নেতা দল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় একাধিক নেতা-কর্মীর অভিমত, জাতীয় পার্টির এখন দুর্র্দিন চলছে। এই অবস্থায় দলের অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।