নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীর, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দাবি

আওয়ার ডেইলি বাংলাদেশ ডেস্ক –

সরকার পতনের পর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীর বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে।

গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সংগঠনটি। সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেও দাবি তুলেছে।

হিযবুত তাহ্‌রীর দাবি করছে, ৫ই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংগঠনটির কর্মীরা মাঠে ছিল।

সংগঠনের মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, হিযবুত তাহ্‌রীর একটি আদর্শ-ভিত্তিক ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন, কোনো জঙ্গীবাদি সংগঠন বা সন্ত্রাসী সংগঠন নয়।

২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের অফিস ছিল এবং সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ অনেকেরই যাতায়াত ছিল।

সংগঠনটির দাবি বিডিআর বিদ্রোহের পর আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ প্রকাশ করে লিফলেট বিতরণের কারণেই তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

“সিম্পলি একটা প্রেসনোট। এখানে কোনো স্মারক নাম্বার নেই, এসআরও নাম্বার নেই, কোন আইনের দ্বারা আমাদের নিষিদ্ধ করা হবে সে আইনের উল্লেখ নেই। আইনের কোন উপধারা সেটা উল্লেখ নেই। সিম্পলি গায়ের জোরে স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদেরকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে,” বলেন মি.ইমতিয়াজ।

“সেইম ভাবে নিষিদ্ধ কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে করা হলো। জামায়াতের নিষিদ্ধটা প্রজ্ঞাপন দ্বারা করেছে আমাদের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন তারা জারি করেনি। তাহলে সেটা (জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা) যদি উঠিয়ে ফেলতে পারে, উঠিয়েছে এজন্য আমরা অভিনন্দন জানাই, আমরা বলতে চাই আমাদের ক্ষেত্রেও সেইম জাস্টিসটা তারা নিশ্চিত করবে।”

আদর্শগতভাবে হিযবুত তাহ্‌রীর-এর লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামি খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা গণতন্ত্র বিরোধী। হিযবুত তাহ্‌রীর কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে সংবিধান চান তারা। এরকম একটি খসড়া সংবিধানও সংগঠনটির রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের কয়েকটি আরব দেশ, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তানে হিযবুত তাহরির নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যেও তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়।

বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সংগঠনটির বক্তব্য হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্বের কিছু দেশে হিযবুত তাহ্‌রীরএর কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অনেক দেশে সংগঠনটি বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রেসনোট জারি করে হিযবুত তাহ্‌রীর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওই প্রেসনোটে সংগঠনটিকে ‘শান্তি শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, হিযবুত তাহ্‌রীরকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় তখন তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

“দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে যোগাযোগ মিলিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছিল এবং তার প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করা হয়েছিল কিনা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল একটা প্রেসনোটের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে,” বলেন মি. খান।

“কিন্তু তার পরেও আমরা দেখেছি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে হিযবুত তাহ্‌রীরের পোস্টারত, লিফলেটিং এবং বিভিন্ন সময় তাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা। এমন একটা সময়ে হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যখন দেশের ভেতরে অনেক জঙ্গী সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল এবং সশস্ত্র আক্রমণের ঘটনাও আমরা দেখেছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *