আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
মুকুল বসু,বোয়ালমারী প্রতিনিধি :-
ফরিদপুরের চাঁদপুর পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামের প্রায় দেড়শো পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে জীবন—জীবিকা নির্বাহ করছে।
ফদিরপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর সংলগ্ন ঝুঁড়ির গ্রাম মল্লিকপাড়া নামে পরিচিত। এখানের বসবাসরত বাসিন্দারা ছোটখাটো ক্ষেত খামারের সাথে জড়িত থাকলেও সারা বছর বেশির ভাগ সময় ঝুড়ি তৈরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। তাদের রোজগারের প্রধান পেশা ঝুড়ি বুনানো। সরেজমিনে জানা যায়, ফরিদপুর—রাজবাড়ী মহাসড়কের ধুলদি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইপাস সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পরে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম নিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ওই ওয়ার্ডের চাঁদপুর পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারাই শুধু ঝুড়ি বুনানোর কাজ করেন। ঈশান গোপালপুর বাজার পার হয়ে আজিজ মাস্টারের বাড়ি হতে বটতলা রমজানের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামে প্রায় দুইশো পরিবারের বসবাস। তাদের মধ্যে ঝুড়ি বানানোর কাজ করেন দেড়শোর পরিবার। যুগের পর যুগ ধরে তারা ঝুড়ি তৈরির কাজ করে সংসার চালান।
এসব বাড়িতে বউ হয়ে আসা নারীরাও শিখে নিয়েছেন ঝুঁড়ি বুনানোর কাজ। বাবার বাড়িতে ঝুড়ি তৈরির কাজ না থাকলেও গ্রামের পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে ঝুঁড়ি তৈরির কাজ করছেন তারা। এদিকে আবার গ্রামের রাস্তায় বিক্রির জন্য ভ্যানে করে তল্লা বাঁশ নিয়ে এসেছেন বাঁশ ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে ঝুড়ি কিনতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার মাদারীপুরের টেকেরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মল্লিকপাড়া গ্রামে ঝুড়ি কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাসিন্দা বাবর আলী মল্লিক বলেন, বাপ—দাদার আমল থেকেই তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে এই ঝুড়ি তৈরির কাজ শিখেছিলেন। এই ঝুড়ি তৈরি করেই সংসার চলে তাঁর। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে প্রতি সপ্তাহে ছোট—বড় মিলে ৪০ থেকে ৫০ টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে তাঁদের আয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে বাঁশের দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে । সেই তুলোনায় ঝুড়ির দাম কম। ‘তল্লা বাঁশ’ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি বাঁশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হয়। একটি বাঁশ থেকে প্রায় চারটি ঝুড়ি তৈরি করা যায়। ছিদ্দিক মল্লিক (৬০) নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে ঝুঁড়ি তৈরির কাজ করি। আমাদের প্রধান পেশা ঝুড়ি বানানো। ছেলে—মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছে সংসার। দিনের বেলা বাঁশ থেকে চটা তৈরি করি। রাতের মধ্যে আবার চটা দিয়ে ঝুড়ি বানানো হয়। রাতদিন মিলে সপ্তাহে প্রায় একশো ঝুড়ি বিক্রি করি। ছেলে—মেয়েরা লেখাপড়া করলেও তারা স্কুল—কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে ঝুড়ি তৈরির কাজে লেগে যায়।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. কালাম শেখ বলেন, পূর্ব মল্লিকপাড়া গ্রামে বানানো বাঁশের ঝুড়ি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্য। তাদের কারণে গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গ্রামটি ‘ঝুড়ির গ্রাম’ হিসেবে পূর্ব পরিচিত। তবে এ পেশায় কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছে।