আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ):
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে মামলা তুলে আনার জন্য মামলার বাদী ও বাদীর পরিবারের সদস্যসহ স্বাক্ষীদের হুমকি দেওয়া অভিযোগ পাওয়ার গেছে।
২৩ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর উপজেলার পূর্ব পিরিজপুর গ্রামের কালাচাঁন মিয়ার ছেলে মামলার প্রধান স্বাক্ষী নূর উদ্দিন (৪৫) ও তার স্ত্রী মামলার বাদী সাজেদা আক্তার (৪০) অভিযোগ করে বলেন, গত ২ডিসেম্বর সোমবার বাজিতপুর থানায় তাদের দায়ের করা ০১(১২)২৪ নং মামলার আসামী তাদের একই গ্রামের মৃত রহমান এর ছেলে নূর আহাম্মদ (৬০), নূর আহাম্মদ এর ছেলে সোহাগ মিয়া (৩৮), সজীব মিয়া (৩৫), সারোয়ার (৩০) ও সাগর মিয়া (২৩) প্রকাশ্যে ও লোকজন দিয়ে তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১ডিসেম্বর রোববার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলার পূর্ব পিরিজপুর গ্রামের মৃত রহমান এর ছেলে নূর আহাম্মদ (৬০), নূর আহাম্মদ এর ছেলে সোহাগ মিয়া (৩৮), সজীব মিয়া (৩৫), সারোয়ার (৩০) ও সাগর মিয়া (২৩) লোকজনসহ দেশীয় মারাত্বক অস্ত্রাদী নিয়ে নূর উদ্দিনের পৈত্রিক ৫ শতাংশ জায়গা অবৈধ ভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টায় মাটি ভরাট করতে গেলে নূর উদ্দিন তার ছেলে মো. হাসান ও ছেলের স্ত্রী অনামিকাকে সাথে নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাধা দেয়। এসময় প্রতিপক্ষ নূর উদ্দিনকে ধাওয়া করে নূর উদ্দিনের বাড়ীতে আসিয়া নূর উদ্দিনসহ তার ছেলে মো. হাসান (২২) ও ছেলের স্ত্রী অনামিকা (১৯) কে মারধোর করে। এতেই প্রতিপক্ষ খ্যান্ত হয়নি, প্রতিপক্ষ প্রকাশ্যে অনামিকাকে টানা হেচড়া করিয়া শ্লীলতাহানী করে তার গলা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। পরে স্বজনরা গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় নূর উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাইজ মাইক্রোবাসযোগে হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রতিপক্ষ পূনরায় হাইজ মাইক্রোবাসে হামলা করে মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় আহত নূর উদ্দিনকে বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তারা আহত নূর উদ্দিনকে এত দূরে না নিয়ে পার্শ্ববর্তী ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ওখাকার চিকিৎসক নূরু উদ্দিনের মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ১৩ টি সেলাই করেন। আহত মো. হাসান ও অনামিকা একই দিনে স্থানীয় ভাবে প্রথমিক চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে ঘটনার দিন ১ডিসেম্বর রোববার নূর উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা আক্তার বাজিতপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পর প্রতিপক্ষের নূর আহাম্মদ, সজীব মিয়া ও সোহাগ মিয়া একটি কাউন্টার অভিযোগ দাখিল করেতে বাজিতপুর থানায় গেলে পুলিশ তাদের আটক করে। পরদিন ২ ডিসেম্বর সোমবার নূর উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা আক্তার (৪০) কে বাদী করে প্রতিপক্ষ নূর আহাম্মদের ছেলে সজীব মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৩/৪ জনের নামে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা রুজু করে পুলিশ। মামলা নং-০১(১২)২৪।
মামলা রুজু হওয়ার পর ওইদিন প্রতিপক্ষের ১নং আসমী সজীব মিয়া, ৩ নং আসমী নূর আহাম্মদ ও ৫ নং আসামী সোহাগ মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার তাদেরকে কিশোরগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন পুলিশ। ওই দিন আসামী নূর আহাম্মদ ও সোহাগ মিয়া জামিনে বাড়ি চলে আসে। গ্রেফতারের ১৮ দিন পর সজীব মিয়া জামিনে বাড়ি আসে। আসামিরা জামিনে বাড়ি আসিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য দুই আসামীকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে ও লোক মারফত মামলার বাদীকে মামলা তুলে আনার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এছাড়া মামলার আসামীরা মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
মামলার বাদী সাজেদা আক্তার (৪০) নূর আহাম্মদকে ভূমিদূস্যু আখ্যা দিয়ে বলেন, প্রতিপক্ষ তাকে হুমকি দিয়ে বলছে যদি তার দায়ের করা মামলা তুলে না আনে তাহলে তার ছেলে হাসানকে মেরে গুম করে ফেলবে। ছেলের স্ত্রী যাতে সমাজে মুখ দেখাতে না পারে সে ব্যবস্থা করার জন্য তারা অনামিকার সর্বনাশ করে ছাড়বে। এছাড়া তার স্বামীকে বাড়ি থেকে বেড় হতে দিবেনা, যেখানে পাইবে সেখানেই মেরে ফেলবে এবং তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানী করবে।
একদিক দিয়ে আসামীদের হুমকি ধামকি অপর দিক দিয়ে মামলার ৩নং আসামী সারোয়ার (৩০) ও ৪ নং আসামী সাগর মিয়া (২৩) প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এমন দাবী মামলার প্রধান স্বাক্ষী নূর উদ্দিন ও মামলার বাদী সাজেদা আক্তারের।
তারা বাকী দুই আসামীদের গ্রেফতারের দাবীসহ তাদের জান মালের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এব্যাপারে মামলার ৫ নং আসামী অভিযুক্ত সোহাগ মিয়া (৩৮) এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, বিজ্ঞ আদালত থেকে তাদের পক্ষে একাধিকবার রায় পাওয়া তাদের ক্রয়কৃত জায়গায় গত ১ ডিসেম্বর তার বাবা (নূর আহাম্মদ) ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করার সময় তার চাচা নূর উদ্দিন ও চাচাতো ভাই হাসান বাঁধা দেয়। এ নিয়ে তার বাবা ও ছোট ভাই সজীবের সাথে চাচা নূর উদ্দিনের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে তার চাচাতো ভাই হাসান একটি লম্বা ছুড়ি নিয়ে এবং তার চাচা নূর উদ্দিন একটি রামদা নিয়ে তার বাবাকে মারতে আসে এ সময় তার ছোট ভাই সজীব ইট দিয়ে ডিল ছুড়লে সেই ইট তার চাচা নূর উদ্দিনের মাথায় লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়া তার চাচাতো ভাই হাসান হাইজ মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে তার ছোট ভাই সজীব একটি লাঠি দিয়ে মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। পরে ওই হাইজ মাইক্রোবাস দিয়ে তার চাচা নূর উদ্দিনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও কেন আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছেনা এ ব্যাপারে জানতে বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।