আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ):
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার ০১(১২)২৪ নং মামলার বাদী সাজেদা আক্তার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার দায়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিলের পর ঘুষের ১৯ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযুক্ত এসআই মো. সাইফুল ইসলাম।
গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার পূর্ব পিরিজপুর গ্রামের নূর উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা আক্তার (৪০) কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এসআই মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার দায়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। গত ৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সীলমোহর যুক্ত আবেদনের রিসিভ কপি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর রোববার জমি সংক্রান্ত বিরুদ্ধের জেরধরে একই গ্রামের সজীব, নুর আহাম্মদ, সরোয়ার, সাগর ও সোহাগসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সন্ত্রাসী বাদীর স্বামী নূর উদ্দিন (৪৫)’কে মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে। এ ঘটনার পর বিচারের আশায় বাজিতপুর থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন আহত নূর উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা আক্তার।
অভিযোগ দায়েরের পরপরই প্রতি পক্ষের লোকজন বাদীসহ বাদীর স্বামীর রিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য থানায় গেলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুরাদ হোসেনের নির্দেশে থানা পুলিশ প্রতিপক্ষের সজীব, নুর আহাম্মদ ও সোহাগকে আটক করে। প্রতিপক্ষের ৩ জনকে আটকের পর থানার কর্তব্যরত এসআই মো. সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন ওসি। এসআই সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর মামলা এফআইআর করার জন্য বাদী সাজেদা আক্তারের নিকট ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সাজেদা আক্তার অনেক কষ্টের পর ধার-দেনা করে ১০ হাজার টাকাসহ তার ভাতিজি স্বর্না আক্তারকে সাথে নিয়ে ওইদিন রাত ১০টার দিকে থানায় গিয়ে থানার ভিতরে স্বর্না আক্তারের মাধ্যমে টাকাগুলো গুনে এসআই সাইফুল ইসলামের হাতে দেন।
এছাড়া এসআই সাইফুল ইসলামের কথায় ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলাটি লেখার জন্য থানার অপর একজনকে নগদ ২ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করেন বাদী। পরবর্তীতে গত ২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাদীর ননাশ মমতাকে সাথে নিয়ে এসআই সাইফুল ইসলামের চাহিদা মতো বাকি আরো ৫ হাজার টাকা এসআই মো. সাইফুল ইসলামের হাতে তুলে দেন।
এরপর এসআই সাইফুল ইসলাম গত ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে বাদীর নিকট আবারও ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে বাদী তাকে ২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
এভাবে দফায় দফায় বাদীর নিকট থেকে মোট ১৯ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর দুপুরে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের গ্রেফতার না করে তাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন ওই এসআই মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সাইফুল ইসলাম আসামীদের আটক না করে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করায় ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমন দাবী করে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন মামলার বাদী সাজেদা আক্তার।
এরপর বাজিতপুর সার্কেলের এএসপি সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বিষয়টি তদন্ত করতে অভিযোগকারী সাজেদা আক্তারকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে ভিডিও বক্তব্য ধারণ করেন।
মঙ্গলবার (২৪ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে মামলার বাদী সাজেদা আক্তার এ প্রতিনিধিকে জানান, কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দাখিলকৃত অভিযোগের ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত এসআই সাইফুল ইসলাম তার বাড়িতে গিয়ে ঘুষের ১৯ হাজার টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চান এবং এমন কাজ আর কখনো করবেননা বলে প্রতিজ্ঞা করেন। পরে থানায় গেলে বাকী আরো ১ হাজার টাকা তাকে ফেরত দেন ওই এসআই সাইফুল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত এসআই মো. সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই মো. সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় দাবী করে বলেন, মামলার বাকী দুইজন আসামীকে গ্রেফতার করতে না পারায় বাদী ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা তিনি মাথা পেতে নিবেন।
এ ব্যাপারে বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুরাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি আমার কাছে আসেনি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিন তদন্ত করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ওই এসআই সাইফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ জেলার একটি তদন্ত কেন্দ্রে বদলী করা হয়েছে।
এব্যাপারে বাজিতপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটির তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।