আজ শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
খেলা ডেস্ক :-
অবসরের ঘোষণা দিলেও যদি সুযোগ থাকে এবং সম্ভব হয় তবে মিরপুরে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় বলতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। নানারকম অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরার অনুমতি পেয়েছিলেন তারকা অলরাউন্ডার। গাজী আশরাফ লিপুর নির্বাচক প্যানেল সাকিবকে স্কোয়াডে রেখে সেটার আরও পরিস্কার বার্তা দিয়েছে। নিজের শেষ টেস্ট খেলতে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক নিজেও রওনা দিয়েছিলেন দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে। তবে শেষ মূহুর্তে বদলে যায় দৃশ্যপট।
সাকিবকে বাংলাদেশ দলে না খেলানোর দাবি জানিয়ে মিরপুরে বিক্ষোভ করেছেন ওই এলাকার ছাত্রজনতা। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। বিক্ষোভের ফলে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হলে সেটার দায়ভার বিসিবিকে নিতে বলেছেন কর্মসূচিতে আসা ব্যক্তিরা। এমন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সাকিবকে দেশে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সাকিবের দেশে না আসার ঘটনায় দেশের মানুষের প্রতি রাগ হচ্ছে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের।
দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম কোচ নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশেরপ্রতি দেশের মানুষের প্রতি কখনই এতো রাগ বা কষ্ট লাগে নাই। আজ কেন যেন লাগছে? আমরা মানুষ কী কখনও নিজেরা ভুল করি না? কেউ অনুতপ্ত হলে তাঁকে একটা সুযোগ দেয় উচিত। কিন্তু আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি মানুষ হিসেবে, দয়া মায়া জিনিসটা আমাদের মধ্যে থেকে উঠে গেছে।’
দেশের হয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ক্রিকেট খেলেছেন সাকিব। ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে। তারকা অলরাউন্ডারের হাত ধরে বাংলাদেশকে চিনেছে পুরো বিশ্বের মানুষ। ক্রিকেটের বাইরের সাকিব কেমন সেটাও সামনে এনেছেন সালাহউদ্দিন। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই কোচ সবার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, মাঠের বাইরে তারাকত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন এবং চিকিৎসা করিয়েছেন সেটা তারা জানেন কিনা।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘একটা মানুষ দেশের জন্য ১৭ টা বছর কিছু না কিছু করেছে। আজ ক্রিকেট বিশ্ব আমাদের একটু সম্মান করে কাদের জন্য? তারা ক্রিকেট মাঠে নামতে পারবে না, এই কান্না তো সবাই দেখবে না। রাজনীতি করছে বলে এরা খুনি? এদের সাথে মিশেছেন? এরা কত মানুষের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে জানেন আপনি? এরা কত অসহায় মানুষের চিকিৎসা করাইছে সেটা কী জানেন ?’
লাল সবুজের জার্সিতে সাকিব, তামিম ইকবাল এবং মাশরাফি বিন মুর্তজার মাঠের লড়াইয়ের কথাও তুলে ধরেছেন সালাহউদ্দিন। হাঁটুর চোটে বারবার যখন ছিটকে গেছেন তখন অপারেশন করে আবারও মাঠে ফিরেছেন মাশরাফি। পুরো ক্যারিয়ারে হাঁটুর অপারেশন করিয়েছেন বেশ কয়েকবার। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে আঙুল ভেঙে যাওয়ার পর দেশের জন্য এক হাতে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন তামিম। সাকিব আঙুলে চিড় নিয়েও খেলেছেন। সালাহউদ্দিন তাই সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সাকিব-মাশরাফিরা কারও উপকার ছাড়া ক্ষতি করেননি এবং তারা খুনিও না।
তিনি বলেন, ‘তারা স্ট্যাটাস না দেয়ার কারণে আজ শত্রু। যখন মাশরাফি ৫ টা অপারেশন করে দেশের জন্য লড়াই করছে তা কী দেখছেন, সাকিব যে আঙুলে চিড় নিয়া বোলিং করে গেছে , তামিম এক হাতে ব্যাটিং করে গেছে কাদের জন্য? দেশকে সবাই কম বেশি ভালোবাসে। এদের ভালোবাসা টা হইতো দেখা যায়ও না। এদের কাছ থেকে দেখেছি , এরা মানুষের উপকার ছাড়া কারো ক্ষতি করেনি। এরা খুনি না।’
দেশের এমন পরিস্থিতিতে সাকিবের দেশে ফেরা হচ্ছে না এবং মাঠ থেকেও বিদায় নেয়া হচ্ছে না। সাকিবের এমন পরিণতি দেখে কষ্ট পাচ্ছেন দেশসেরা এই কোচ। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘খুব কষ্ট পাচ্ছি এদেরকে মাঠ থেকে বিদায় দেখতে পাব না। মানুষকে মাফ করুন, আল্লাহ আমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে দেবেন। আমরা সবাই কম বেশি অপরাধী, সম্মান কাউকে দিলে আপনি ও সম্মানীত হবেন।’