আজ শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
আক্কাছ আলী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি :
মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর দালালের দৌরাত্মে সেবা গ্রহিতারা নানা বিড়ম্বনায়। আর আগুনে ভস্মীভূত নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের দুই উপজেলার সেবা দিচ্ছে মুন্সীগঞ্জ অফিস। এতে দালাল চক্রের তৎপরতা বেড়েগেছে। তাই হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেক রেমিট্যান্স যোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। জনবলের অভাবের দোহাই দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
অসহনীয় পরিবেশে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। বিশৃঙ্খল পরিবেশেই কাগজপত্র জমা নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স পেলে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ ও ছবি তোলার জন্য আরও লম্বা লাইন। জমা দেওয়ার পর আবার কারও কারও কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার অনেকে নির্ধারিত সময় অতিক্রান্তের পর নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে এসেও ফিরে যাচ্ছেন। টুকিটাকি কিছু ভুলের কারণ দেখিয়েও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সেবা গ্রহীতাদের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুল সংশোধন করা পাসপোর্ট ঢাকায় পেন্ডিং আছে ৩ শতাধিক। এগুলো আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়। কিন্তু সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ দালালের মাধ্যমে আবেদন করলে সহজেই পাসপোর্ট মিলে।
পাসপোর্ট করতে আসা এক ভোক্তভোগী বলেন, ‘দালাল ছাড়া যদি আসি। তাহলে আমার পাসপোর্টটাই হবে না। যারা দেশে আছে তাদেরটাও না, আমরা যারা প্রবাসী আছি তাদেরটাও না। দালাল ছাড়া যদি আমরা এখানে আসি শুধু ঘুরতে হবে। আমাদের পাসপোর্ট জীবনেও হবে না সেটা আমরা ভালো করে জানি। অবশ্যই সিস্টেম চেঞ্জ করা উচিত।
পাসপোর্ট করতে আসা আরেক যুবক বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের রাস্তা থেকে জিজ্ঞেস করে পাসপোর্ট বানাবেন। টাকা দেন ক্লিয়ার করে দেই। দালালকে দিলে ৫ মিনিটেই হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ নিজেরটা নিজে নিজে আসে। ওইটা ৫ ঘণ্টাতেও হয় না। শত শত লোক এসে দাঁড়িয়ে আছে। বসার কোনো ডিসিপ্লিন নাই।’
মধ্যবয়সী এক সেবাগ্রহীতা বলেন, ‘জেনুইনভাবে পাসপোর্ট করতে আসা লোক এখানে অপমান অপদস্ত ছাড়া আর কিছুই হয় না। দালালদের ২০০/৫০০ টাকা দিলে ১০ মিনিটের ভিতরে কাজ হয়ে যায়। এটাতো বাংলাদেশের জনগণ আশা করে না। এখানে কোনো নিয়মনীতি নাই। অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে গেছে।’
পাসপোর্ট করতে আসা এক নারী সেবাগ্রহণকারী বলেন, ‘যখন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্টের মাধ্যমে আবেদন করি। তখন দালালকে ১২ হাজার টাকা দেই। ১২ হাজার টাকায় ১৪ দিনে পাসপোর্ট খুব সহজেই পেয়ে যাই। এখন পাসপোর্ট পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
পাসপোর্ট করতে আসা এক নারী সেবাগ্রহণকারী বলেন, ‘যখন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্টের মাধ্যমে আবেদন করি। তখন দালালকে ১২ হাজার টাকা দেই। ১২ হাজার টাকায় ১৪ দিনে পাসপোর্ট খুব সহজেই পেয়ে যাই। এখন পাসপোর্ট পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
আরেক পাসপোর্ট আবেদনকারী বলেন, ‘এটা একটা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখানে রুম রয়েছে
পর্যাপ্ত। কিন্তু অপারেটরের সংখ্যা সীমিত। এখানে আমরা আরও বেশি অপারেটর চাই। যাতে জনগণকে জিম্মি করা না হয়। অপারেটর বেশি থাকলে জনগণ বেশি সেবা পাবে। এতে আমরা উপকৃত হবো।’
আর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের থেকে আসা সরকারি চাকরিজীবী আনোয়ারা আক্তার অভিযোগ করে জানান, তার ছবির সাথে ঢাকার উত্তরার পশ্চিম আব্দুল্লাপুরের রেহানা আক্তারের চেহারার মিল থাকায় দীর্ঘদিন ঘুরেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। এছাড়া একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন- তাদের ফাইল জমা দেয়ার পরও দিন শেষে ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে নানাভাবে ধর্ণা দেয়ার পর ফাইল বের হয়। অফিসটিতে নিয়ম শৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই, ফ্রি স্টাইল চলছে উল্লেখ করে সিরাজদিখান থেকে এসা এক মালেশিয়া প্রবাসী প্রশ্ন করে বলেন, এভাবে একটা পাসপোর্ট অফিস চলতে পারে?
মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটির উপপরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার
বলেন, ছাত্র আন্দোলনে পুড়িয়ে দেয়া নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস ৪ মাসেও চালু করা যায়নি। তাই নারয়ণগঞ্জের বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ পাসপোর্ট করতে আসেন মুন্সীগঞ্জে। বাড়তি চাপ আবার জনবল সঙ্কটে সমস্যায় পরতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ দেয়া হলেও বেশ কিছুদিন দেয়া হচ্ছে না। স্বল্প সংখ্যক আনসার কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এছাড়া দালালের দৌরাত্ম্য নিয়ে তিনি বলেন, অফিসের ভেতরে কোনো দালাল নেই। বাইরের বিষয়তো আমাদের কন্ট্রোলে নেই।
তিনি জানান, গেল অক্টোবর মাসে মুন্সীগঞ্জ অফিস থেকে প্রায় ৮ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন এখন গড়ে ৩শ’ আবেদন জমা পড়ে। নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্টটি গত ১৭ জুলাই পুড়িয়ে দেয়া হয়। তাই এখন নারয়ণগঞ্জের ৭ উপজেলাকে ৩টি স্থানে পাসপোর্টের কার্যক্রম স্থান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সদরের পাসপোর্টের কার্যক্রম চলছে। নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দাদের পাসপোর্টের কার্যক্রম। আর মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলছে বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার কার্যক্রম।