আজ রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :–
নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের এক নারী ইউপি সদস্যকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক আলামত মিলেছে। শনিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশীদ টুলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, শনিবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেই ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অন্যতম অভিযুক্ত ফারুক হুসাইনকে (৫০) আটক করেছে। ফারুক হুসাইন মাইজপাড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের উসমান মোল্যার ছেলে। শনিবার সকালে নড়াইল সদর থানা পুলিশের ওসি সাজেদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশন সেলের এসআই আলী হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ফারুককে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
শনিবার দুপুরে পিবিআই যশোরের ইন্সপেক্টর শ্যামল কুমারের নেতৃত্বে পিবিআই’র একটি দল নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে ধর্ষণের ঘটনাস্থল এবং ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে যান। এ সময় নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবিরসহ পিবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে ২০-৩০ মিনিটের মতো অবস্থানকালে ধর্ষণের ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় ওই বাড়িতে বসবাসকারী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাহিদা বেগম (৪০) নামের এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন তারা। এরপর ভুক্তভোগী ওই নারী ইউপি সদস্যের বাড়ি পরিদর্শনে যান পুলিশ কর্মকর্তারা ।
এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশীদ টুলু বলেন,‘ ওই নারীর শরীরে ধর্ষণের ক্ষত ও পেটে বিষের অস্তিত্ব মিলেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীকে ধর্ষণ করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে এলে বিস্তারিত বলা যাবে। তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্ত শেষে নারীর মরদেহ শুক্রবার বিকেলে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে ।
ভুক্তভোগী ওই নারীর ছেলে ও স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে টিসিবির মালামাল বিতরণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয় যুবক রাজিবুল পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য ওই নারী ইউপি সদস্যকে ফোন করেন। এরপর তিনি টাকা আনতে তার ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের জনৈক মোক্তার মোল্যার বাড়িতে গেলে রাজিবুল ও ওসমানের বড় ছেলে ফারুকসহ কয়েকজন তাঁকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এছাড়া ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এ ঘটনা ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার পাল্টা হুমকি দিলে তাঁর মুখে বিষ ঢেলে দেয়। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে ভয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি। তবে তিনি অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতা বাড়লে পরদিন বুধবার তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তিনি ছেলের নিকট তাঁর ওপরে নির্যাতনের বর্ণনা ও জড়িত ব্যক্তিদের নাম বলে গেছেন। এরপর বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১১ টার দিকে যশোর জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন,‘ ওই নারী ইউপি সদস্যকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যান্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ও পিবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এবং এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।’