আজ রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

Logo
মাত্র ৩০ দিনেই গাড়ি-বাড়ির মালিক বিএনপি নেতা আব্দুল হক

মাত্র ৩০ দিনেই গাড়ি-বাড়ির মালিক বিএনপি নেতা আব্দুল হক

ডেস্ক নিউজ :-

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, লুটপাট, জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। তিনি মাত্র ৩০ দিনেই চাঁদাবাজি করে অর্ধকোটি টাকার গাড়ি ও বাড়ি করেছেন বলে জানা গেছে।

দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলার মতো এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি ও লুটপাটে অতিষ্ঠ মিরপুর উপজেলার মানুষ। তিনি মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হক। তার ক্যাডারবাহিনীর বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ। জেলার দায়িত্বশীল নেতারা তাকে সতর্ক করার পাশাপাশি কেন্দ্রেও অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আব্দুল হক ২০০০ সালের আগে ছিলেন জাসদ গণবাহিনীর সক্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দক্ষিণ হস্ত। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি যোগদেন বিএনপিতে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলীয় এক শ্রেণির নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাট ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের পতনের দিনই নেতাকর্মীদের আইন নিজ হাতে তুলে না নিতে কঠোর বার্তা দেন। এরই অংশ হিসেবে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলবাজির অভিযোগে এরইমধ্যে কয়েকশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। তার পরও থেমে নেই চাঁদাবাজি-দখলবাজির অভিযোগ।

জান যায়, ৫ আগস্টের আগেও আর্থিক দুরবস্থায় ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল হক। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর এই বিএনপি নেতা নিজ এলাকা কুষ্টিয়ার মিরপুরে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলদার বাহিনী গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে- চাঁদাবাজি করে আব্দুল হক মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি মাইক্রোবাস, ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি প্রাইভেট কার। সেইসঙ্গে নিজ গ্রাম গোয়াবাড়ীতে চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তৈরি করছেন আলিশান বাড়ি। সেখানে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

অভিযোগে জানা যায়, আমলা সদরপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের দখলে থাকা জলাশয় দখলে নিয়ে সব মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন আব্দুল হক। আমলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সাহাজুল ইসলামের কাছে লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তার দোকানঘর দখল করেছেন। কাতলামারিতে পুকুর দখল করে নেয়ায় শফিউল্লাহ রাজ নামের এক ব্যক্তি হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান। হুমকির কারণে তার পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এ ছাড়া আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফ্ফারের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল হকের বিরুদ্ধে। আমলা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক মাসুমুল ইসলাম মাঝির কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে তাকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করেছেন তিনি। মাসুমুল ইসলাম মাঝি বলেন, এমপি থাকাকালে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু একবার আমার বাসায় এসেছিলেন। এটাই আমার অপরাধ।

আমলা বিএডিসির ফার্মের ঠিকাদার রমজান আলী মেম্বারের কাছে আব্দুল হকের ক্যাডারবাহিনী ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলেও অভিযোগ আছে। রমজান আলী বলেন, আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে আব্দুল হকের বাহিনী একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

মিরপুর উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হক, ৫ আগস্টের আগে যাকে বিএনপির কর্মসূচিতে আনতে বাড়িতে মোটরসাইকেল পাঠানো লাগত, ৫ আগস্টের পর তার ভাই মুসা, ভাতিজা শাহীন, মাঝা, আত্মীয় শাহাবুল, হামিদ, আশা মেম্বার ও ক্যাডারবাহিনী উপজেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। তিনি এখন অর্ধকোটি টাকা দামের গাড়ি হাঁকাচ্ছেন। চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছেন। তার কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান বলেন, মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল হকের চাঁদাবাজির কারণে মিরপুরবাসী অতিষ্ঠ। আমরা দলীয়ভাবে প্রতিবাদ করেও সুরাহা করতে পারছি না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হয়েছে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা আলহাজ আব্দুল হক বলেন, আমি কারও কাছে চাঁদাবাজি করিনি। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। নিজের টাকা দিয়েই মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার কিনেছি, বাড়ি তৈরি করছি। আমার ব্যক্তিগত শত্রুরা মিথ্যা রটাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, আব্দুল হকের চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। শুধু তিনি নন, অনেকেই এমন দুষ্কর্ম করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আপনারা সবার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করুন। আমরা তদন্ত করে দলীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, আব্দুল হকের চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। তবে কুষ্টিয়ায় কোনো চাঁদাবাজের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নেই। একদল দুষ্কৃতকারী পূর্ব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, লুটপাট করে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করছে, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে অনুরোধ করেন এই নেতা।

Please Share This Post in Your Social Media

All rights reserved © 2024 ourdailybangladesh.com