আজ শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ :-
উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জমিতে ঘর উঠিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও দীর্ঘদিন ভাড়া বকেয়া থাকায় নোটিশ এবং তালা ঝুলিয়ে দেয় বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসক। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে চূড়ান্তভাবে চুক্তি বাতিল করা হবে বলে নোটিশে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা শহরের শেরে বাংলা সড়কে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নোটিশ ও তালাবদ্ধ করেন।
বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বরগুনা পৌরশহরের শেরে বাংলা সড়ক (ফার্মেসি পট্টি) এলাকায় ভাড়ার চুক্তিতে ৫৫২ স্কয়ার ফিট আয়তনের জমিতে ঘর উত্তোলন করে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। পরে ওই ঘরটিকেই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত করা হয়। এছাড়াও ভাড়ার চুক্তি অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের সকল জমির ভাড়া প্রতি দুই বছর পরপর ২০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত ওই ঘরের কোনো ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। এতে হিসেব অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দীর্ঘ ১৬ বছরের ভাড়া বকেয়া থাকায় ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকারও বেশি। আর এ বকেয়া ভাড়া আদায় করতেই নোটিশ টানানোর পাশাপাশি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি।
লাল রংয়ের বড় আকারে লেখা ব্যানার সম্বলিত নোটিশটিতে উল্লেখ করা হয়, এতদ্বারা উপজেলা পরিষদ, বরগুনা সদর, বরগুনা এর আওতাধীন সকল দোকানঘর ভাড়াটিয়াদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বরগুনা শের-ই বাংলা রোডস্থ ফার্মেসী পট্টিতে অবস্থিত উপজেলা পরিষদের নিজস্ব ভূমিতে নির্মিত ঘরগুলো শুধুমাত্র বানিজ্যিককার্যে ব্যবহারের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, বকেয়া ঘরভাড়া আগামী ১৫ অক্টোবরের পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আগামী ১ নভেম্বর হতে ঘরভাড়া বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা বলেন, বরগুনা বাজারে আমাদের ১৬ টি ভিটি রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেয়া থাকে। যেহেতু উপজেলা প্রশাসনের আয়ের উৎস এখন কমে যাচ্ছে একারণে নিয়ম অনুযায়ী ভিটির ভাড়া পুন নির্ধারণ করা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর জুলাইয়ের ১ তারিখ নির্ধারিত ভাড়ার ২০% বৃদ্ধি করা হয়। তবে গত বছর ২০২৩ সালে আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করিনি।
এ বছরও আমরা উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারিনি। কিন্তু যে দোকান গুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি এবং যাদের বকেয়া আছে তাদেরকে একটি নোটিশ দিয়েছি। এ সময় একটি বন্ধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, পরে আমরা জানতে পারি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরগুনা জেলা শাখার নামে নেয়া ছিল। পরে ওখানে সংশ্লিষ্ট কাউকে না পাওয়ায় সরকারি বিধি অনুযায়ী নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা যদি বকেয়া পরিশোধ করে এবং তাদের ভাড়া কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চায় তাহলে পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।
বকেয়া ভাড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট ওই সময়ের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেকের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখেছি ঘরগুলো ভাড়া এক হাজারা টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ অফিসের ভাড়াও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা ছিল এবং সে ভাড়া পূর্বেও দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আমরা তাদের ভাড়া দেয়ার কোনো তথ্য পাইনি।
বর্তমান সময়ে এখন পর্যন্ত আমরা পূর্ণাঙ্গ হিসাব বের করতে না পারলেও প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ লাখ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর ধরে আমাদের কাছে বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া থাকার কারণেই আরও বেশ কয়েকটি দোকানসহ ওখানে আমরা নোটিশ করছি। বকেয়া ভাড়া পেলে উপজেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বলেন, মূলত উপজেলা প্রশাসন আমাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করবেনা তাই তারা তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। বকেয়া টাকা আমরা পরিশোধ করলেও উপজেলা প্রশাসন দলীয় কার্যালয় হিসেবে পরিচালনার জন্য তারা আর চুক্তি নবায়ন করবেনা বলে তাকে জাননো হয়েছে।